আজকে আমরা শিখবো কিভাবে সূর্য দেবকে প্রণাম করতে হয়। সূর্য প্রতিদিন নতুন
ভোরের সূচনা করে। সূর্য নমস্কার নামটি সংস্কৃত "সূর্য" ও "নমস্কার", "অভিবাদন" বা
"প্রাণাম" থেকে এসেছে অন্যান্য দেব-দেবীদের মধ্যে প্রধান হলেন সৌরদেবতা।
কারো মতে তিনি কাশ্যব ও অদিতির পুত্র আবার কোন কোন মতে তিনি ইন্দ্রের পুত্র।
সূর্যের মূর্তিশিল্পে তিনি সাতটি ঘোড়াবাহিত রথের ঘোড়াগুলি সাতটি পৃথক পৃথক রঙের
প্রতিক সূর্যের প্রতি শ্রদ্ধায় প্রধান উৎসব হল-মকর সংক্রান্তি, পোঙ্গাল, সাম্বা
দশমী, রথ সপ্তমী, ছট পূজা ও কুম্ভমেলা।
সূর্যদেবের প্রণাম মন্ত্র
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম।
ধান্তরীং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।।
সূর্যদেবের প্রণাম মন্ত্রের বাংলা অর্থ-
জবাপুষ্পের মত লোহিত বর্ণ, অন্ধকারণাশক
মহাদ্যুতিবিশিষ্ট, সর্ব্বপাপবিনাশক কাশ্যপপুত্র
সূর্যকে প্রণাম করি।
সূর্য প্রণাম পদ্ধতি-
সূর্য দেবতাকে যেমন মূতি হিসেবে পূজো করা হয়, তেমনি ভোরবেলা উদিত সূর্যের আরাধনা
করা হয়।সকাল বেলা স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে তাম্র পাত্র নিয়ে সেই পাত্র
জলে পূর্ণ করে তারপর সূর্য দেবতাকে জল অর্ঘ্য প্রদান করতে হয়।( তাম্র পাত্রে যেসব
উপকরণ দিতে হয়- কয়েক দানা অতপ চাল, গুড় কিংবা বাতাসা, দূবা, লাল জবা)। লাল রং
সূর্য দেবের অতন্ত প্রিয় তাই আমরা সূর্য দেবের পূজোয় লাল জবা দিয়ে থাকি। এরপর সকল
উপকরণ পাত্রের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। এরপর দু’হাতে তাম্র পাত্র নিয়ে সূর্য দেবকে
জল দিয়ে অর্ঘ্য দিতে হবে। নিচে একটি ছবির মাধ্যমে তা বুঝানো হলো-
আরো পড়ুনঃ একাদশী তালিকা ২০২২ গোস্বামী মতে
সূর্যদেবকে জলের অর্ঘ্য দেওয়ার সময় এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে- সূর্যদেবকে জল দেওয়ার মন্ত্র
ওম আদিত্য নমহ’ অথবা ’ওম ঘ্রিনি সূর্যায় নমহঃ।’
বিঃদ্রঃ সূর্য দেবকে অর্ঘ্য দেওয়ার সময় আপনার মুখ যেন অবশ্যই পূর্ব দিকে
থাকে( কেননা সূর্য
ভোরবেলা পূর্ব দিকে উঠে)।
নতুন সকাল নতুন শক্তি, নতুন আশা ও নতুন কিছু নিয়ে ভরিয়ে তুলতে প্রতিদিন সূর্য
দেবতাকে জলের অর্ঘ্য দিতে হয়। রোজ সূর্যপ্রণাম করলে আপনার মানসিক ও শারীরিক
স্বাস্থ্য উন্নত হয় এবং আপনি নিজের মধ্যে নতুন শক্তি অনুভব করবেন। প্রতিদিন তা
সম্ভব না হলে নিজের সুবিধেমতো সময় সূর্যকে জলরে অঘ্য নিবেদন করতে পারেন। তবে যদি
প্রতিদিন সূর্যকে জলরে অঘ্য দিতে পারেন, তাহলে আপনার জন্য ভালো। স্বয়ং
রামচন্দ্রও প্রতিদিন সূর্যদেবতার পুজো করতেন।
সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করলে সূর্যের মতো তেজ শক্তি বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি,
দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ করতে সূর্যকে জল অর্পণ করা খুবই উপকারী। তাছাড়া
বৈজ্ঞানিকভাবেও এটা প্রমাণিত যে সকল শক্তির মূল হলো সূর্য। তাছাড়া সকাল সকাল ঘুম
থেকে উঠলে শরীর ও মন ভালো থাকে এবং রোগ মুক্ত থাকা যায়।
সকালে ব্রহ্ম মুহুর্তে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে সূর্য প্রার্থনা মন্ত্র এবং সূর্য
গায়ত্রী মন্ত্র জপ করতে হবে। এই মন্ত্রের পাশাপাশি সূর্য গায়ত্রী মন্ত্রের
জ্ঞান থাকাও খুব উপকারী। এর ফলে সূর্য দেবতা শীঘ্রই প্রসন্ন হন এবং ভক্তদের
আশীর্বাদ করেন।
সূর্য গায়ত্রী মন্ত্র-
“ওম আদিত্য বিদমহে দিবাকরই ধীমহি তন্নে সূর্যহ প্রচোদয়তা।”
মন্ত্রের অর্থ:
“ওম অহি সূর্য সাহা শ্রানশান তেজোরশে জগ তপ্তে, অনুকাম্পায়মা ভক্ত্য, গৃহার্ঘ্যম
নমো স্ততে।”
সূর্য গায়ত্রী মন্ত্রটি সূর্য দেবতার আশির্বাদ পেতে জপ করা হয়। পবিত্র মনে এই
মন্ত্রটি ৯,১১ বা ১০৮ বার মন্ত্রটি পাঠ করার নিয়ম কয়েছে। সূর্যদেবের উপাসকরা ১০৮
বার সূর্য গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করেন।
সকালে ব্রহ্ম মুহুর্তে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে সূর্য
দেবের প্রার্থনা মন্ত্র এবং সূর্য গায়ত্রী মন্ত্র জপ করতে হয়। এই মন্ত্রের
পাশাপাশি সূর্য দেবের গায়ত্রী মন্ত্রের জ্ঞান থাকাতে হবে। এতে সূর্য দেবকে
শীঘ্রই প্রসন্ন করা যায় এবং সূর্য দেবের আশীর্বাদ লাভ করা যায়।
আরো পড়ুনঃ
আপনার রাশিফল জানুন
সূর্য প্রণাম মন্ত্রের উপকারিতা
সপ্তাহের ৭ দিনেই সূর্য দেবের পূর্জা করার বিধান রয়েছ। কিন্তু বিশেষ করে রবিবারে
সূর্য দেবের পূর্জার দিন বলে ধরা হয়। কেউ যদি প্রত্যেকদিন সূর্য দেবের পূজা করতে
না পারে তাহলে যেন শুধু রবিবারে সূর্য দেবের পূজা করেন তাহলেও তিনি সন্তুষ্ট হন।
শাস্ত্র মতে সূর্য হল প্রাণের উৎস। তাই সকাল বেলা সূর্য প্রণাম করলে জীবনে চলার
পথে আসা সব ধরনের বাঁধা হতে তিনি রক্ষা করেন। ফলে কোনে ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা
থাকে না। সেই সঙ্গে পরিবারের সুখ-শান্তি বজায় থাকে। তাই আনন্দে সারাটা জীবন
কাটাতে আমাদের সকলের উচিত প্রতিদিন সকালে সূর্যকে জলের অর্ঘ্য প্রদান করা।
নিয়মিত সূর্য দেবের মন্ত্র পাঠ করলে নানা ধরনের চোখের সমস্যা এবং মাথা যন্ত্রণা
হওয়া হ্রাস পায়। তাছাড়া শরীর বার্ধক্য সহজে আসতে পারে না যার ফলে অনেক দিন থাকে।
বিশ্বাস করা হয় যে নিয়মিত সূর্যকে জল অর্ঘ্য প্রদানে মনের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকা
খারাপ চিন্তা দূরে থাকে। তাছাড়া সূর্যের রশ্মি থেকে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা বাড়তে
থাকার কারণে নানাবিধ রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। শরীর, মন এবং আত্মাকে চাঙ্গা
রাখতে সূর্য দেবকে প্রতিদিন প্রণাম করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ মাঘ মাসের কত তারিখে সরস্বতী পূজা ২০২৪
বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত কিছু তথ্য-
১. ইহা দেহের প্রতিটি অঙ্গে ব্লাড সার্কুলেশন এ সাহায্য করে।
২. হার্ট ও ফুসফুসের কার্যকারিতায় বিশেষ ভুমিকা পালন করে।
৩. হাতের মাসলকে শক্তিশালী করে।
৪. মেরুদন্ডকে ফ্লেক্সিবল করতে সাহায্য করে
৫. ওজোন কমাতে & ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে।
৬. মেধা শক্তি বাড়ায়।
৭. হজম শক্তি বাড়ায়।
আরো অনেক অনেক সূর্য প্রণামের উপকারিতা রয়েছে। অথাৎ সূর্য দেবকে প্রণামের মাধ্যমে
আমাদের দুইটি উপকারিতা হয় ১.আমদের ধর্ম পালন করা হয় এবং ২.শরীর ও মন সুস্থ থাকে।
আমাদের সনাতন ধর্মের আরো অনেক উপাসনার রয়েছে যেগুলো বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত যে
সেসব উপাসনা আমাদের বাস্তব জীবনে অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
Tags:
হিন্দু ধর্মীয় পোস্ট