খুসখুসে বিরক্তিকর কাশির ঔষধ।ও ঘরোয়া উপায় ২০২৪

 কাশি

আমাদের দেশে রাস্তা-ঘাটে চলাচল করা খুবই কষ্টকর। ধূলো-বালি আর জানবাহনের কালো ধোঁয়া মিলে বাতাস দূষিত হয়ে যায়। আর বাতাসের সাথে ধূলো-বালি আরো অন্যান্য আবর্জনা মিশ্রিত হয়ে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে নানা জীবাণু প্রবেশ করে। 
খুসখুসে বিরক্তিকর কাশির ঔষধ
এ সমস্ত জীবাণু অতিরিক্ত উত্তেজনা মূলক হয়ে আমাদের শ্বাসনালী থেকে জোর বাতাস বের করার যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তাই কাশি।

কাশির অন্যতম বিশেষ কারণগুলি হল :

১, ঠান্ডা আবহাওয়া: আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় সচরাচর সবাই ঠান্ডা-কাশিতে আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টা খুব সতর্কতার সাথে অতিবাহিত করা।
২, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ: নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, সর্দি, ফ্লু, ব্রঙ্কাইটিস, এবং এ জাতীয় শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে কাশি হতে পারে।
২, অ্যালার্জি: অ্যালার্জির বিষয়টা সবার স্বভাবের উপর নির্ভর করে। যেমন-ধূলো-বালি , দূষিত ধোঁয়া, গৃহপালিত পোষা প্রাণীর লোম, এবং এ ধরণের সংক্রমণের কারণে কাশি হতে পারে।
৩,ফুসফুসের ক্যান্সার: ফুসফুসের ক্যান্সারের একটি প্রধান লক্ষণ হল দীর্ঘস্থায়ী কাশি।
৪, ধূমপান: ধূমপানের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।ধূমপানের কারণে শ্বাসনালীতে এক প্রকার জ্বালা সৃষ্টি করে এবং কাশির কারণ হতে পারে। আর ধূমপান এমন একটা ক্ষতিকর নেশা যার কারণে ক্যান্সার হয়। যা নিজের সন্তানের উপর ও প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং অন্যান্য নেশা জাতীয় বস্তু থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি ধূমপান থেকে ও বিরত থাকা উচিত।
৫, গ্যাস্ট্রোওসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD): GERD হল এমন একটি অবস্থা, যার কারণে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীকে ঘিরে নেয় এবং এর কারণে ও কাশির হতে পারে।
৬, ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কাশি হতে পারে। এজন্য ঔষধ সেবনে সবসময় ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে চলা উচিত।
৭, অ্যাজমা: অ্যাজমা এমন একটি রোগ , যার কারণে দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। এর কারণে প্রচুর পরিমাণে কাশি, হাঁপানি, এবং বুকের শ্বাসনালীতে এক ধরনের শব্দ হতে পারে।

কাশির ধরণ:

কাশির ধরন এবং তার প্রবলতা দেখে আপনাকে কাশির জন্য দ্রুত নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। কোন রোগ বা রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।কোন রোগ কে হালকা মনে করে কখনো উদাসীন না হওয়া।

১,শুকনো কাশি :একটু পর পর শুধু শুকনো কাশি আশা। যার কারণে গলা খুসখুস করে। এবং ভিতর থেকে কফ বের হয় না।
২,ভেজা কাশি : এই কাশি হলে ভিতর থেকে কফ বের হয়।
৩,অ্যালার্জিক কাশি: সাধারণত ঋতুর পরিবর্তনে যেহেতু আবহাওয়ার ও পরিবর্তন হয়ে থাকে।তাই এ সময়ে বিশেষ করে অ্যালার্জিক কাশি দেখা দেয়।
৪, দীর্ঘস্থায়ী কাশি: সাধারণত কাশি ৭-৮ সপ্তাহ পরিমাণ চলমান থাকলে এই কাশি কে দীর্ঘস্থায়ী কাশি বলে।

কাশির লক্ষণসমূহ:


কোন রোগব্যাধি কে হালকা ভেবে উদাসীন হওয়া ঠিক নয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য সেবা আবশ্যক। সুতরাং কাশির সাথে সাথে নিম্নে উল্লেখিত লক্ষণগুলো দেখা দেওয়া মাত্রই বিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শের জন্য সাক্ষাত করা করতে হবে। এবং দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
  • ১,কাশির সাথে যদি জ্বর হয়।
  • ২,যদি কাশির সাথে রক্ত বের হয়।
  • ৩,কাশির পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে।
  • ৪, কাশির সাথে বুকে ও গলায় ব্যথা অনুভব হলে।
  • ৫,আপনার শিশু সন্তানারে কাশি হলে আপনার নিজের জন্য ও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
  • ৬, প্রচন্ড কাশির মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
  • ৭,কাশির ফলে দ্রুত ওজন কমে গেলে।

কাশি প্রতিরোধের জন্য কিছু টিপস:

প্রতিনিয়ত আমাদের চলাচল এবং কর্মকান্ডের প্রতি আমরা একটু খেয়াল করলেই নানা রকম অসুস্থতা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো মাথায় রাখলে আমরা কাশি সহ নানাবিধ রোগব্যাধি থেকে বাঁচতে পারবো।

১, নিয়মিত হাত ধোয়া: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সুস্বাস্থ্যের অন্যতম কারণ। আমাদের হাতে বিভিন্ন জীবাণুর বসবাস হয়ে থাকে। যার কারণে, সর্দি , কাশি সহ নানাবিধ রোগের সম্মুখীন হতে হয়। সুতরাং নিয়মিত হাত ধৌত করার মাধ্যমে আমরা এসব রোগব্যাধি থেকে বেঁচে থাকতে পারবো। ধূলো-বালি এবং দূষিত বায়ু থেকে দূরে থাকা।

২,অ্যালার্জেন এড়ানো: যে সব কাজে আপনার অ্যালার্জি হয়ে থাকে । সে সব কাজ সবসময় এড়িয়ে চলা। প্রয়োজনে অন্যকে দিয়ে করানো।

৩,ধূমপান ত্যাগ করা: ধূমপান হল কাশির অন্যতম কারণ। ধূমপান ত্যাগ করে নিজে বাঁচুন। এবং পরিবারকে বাঁচাও।

৪,স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া: খাবারের বিষয়ে সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে কাশি সহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।এ সময় ঠান্ডা জাতীয় পানীয় এবং খাবার একেবারে না খাওয়া।

কাশির চিকিৎসার জন্য কিছু সাধারণ ঘরোয়া উপায়:

কাশি সাধারণ থাকা অবস্থায় ঔষধ সেবনের পূর্বে ঘরোয়া ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়া ভালো। ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে কখনো কখনো অনেক রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।
  • ১,মধু: কাশির কারণে গলায় খুসখুস অনুভব হয়। আর মধু পান করলে গলা এবং কাশির জন্য বেশ অনেক উপকারী হয়ে থাকে।
  • ২, আদা: আদা খাইলে গলার খুসখুস ভাব দূর হয়ে যায়।
  • ৩, তুলসী পাতা: কাশির জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ঘরোয়া চিকিৎসার হল তুলসী পাতা।
  • ৪, গরম পানি: হালকা লবণ মিশিয়ে পানি গরম করে গড়গড়া করলে গলার খুসখুস ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
  • ৫, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা: নিয়মিত পানি পান করলে শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকে। এবং কফ পাতলা করে । যার ফলে দ্রুত কাশি দূর করতে সাহায্য করে।
  • ৬, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া: পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম এবং বিশ্রাম শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কাশি দূর করতে সাহায্য করে।
উপসংহার: কাশির পরিমাণ বেশি হলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা। কখনো নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করা। কেননা কাশির চিকিৎসা হয় তার কারণ ও ধরণ অনুযায়ী।
নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম